বিজেপি সরকার গড়লে পশ্চিমবঙ্গের সর্বনাশ হবে বললেন ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ‍্যমন্ত্রী

3rd February 2021 8:06 am বর্ধমান
বিজেপি সরকার গড়লে পশ্চিমবঙ্গের সর্বনাশ হবে বললেন ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ‍্যমন্ত্রী


প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( বর্ধমান ) :  কেন্দ্রের সরকার কৃষক বিরোধী বিল পাশ করে আসলে বড় পুঁজিপতিদের হাত শক্ত করছে ।এরফলে প্রকৃত কৃষকরা বঞ্চিত হবে আর কর্পোরেট সংস্থা গুলি  সুবিধা পাবে বলে মঙ্গলবার জানালেন ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মাণিক সরকার ।এদিন বিকালে বর্ধমান টাউন হলে অনুষ্ঠিত হয় সিপিআইএম এর জনসভা ।  সেই সভায় বক্তব্য রাখতে উঠে কেন্দ্রে ও ত্রিপুরার বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে মাণিক সরকার  তীব্র আক্রমণ শানান । একই সঙ্গে তিনি বার্তাদেন,“পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে সরকার গড়তে দেবেন না । তাহলে বড় সর্বনাশ হয়ে যাবে । “ বর্ধমানে জনসভার মঞ্চ থেকে মাণিক সরকার আরো বলেন ,বিজেপি ‘ডিভাইড এ্যন্ড রুল’ অর্থাৎ ধর্মের মাধ্যমে আন্দোলনকে ভাগ করতে চাইছে । সেই কারণে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে ভেঙে দেওয়া হচ্ছে । মাণিক বাবু দাবি করেন, লকডাউনে মানুষকে বিপদে ফেলেছিল বিজেপি সরকার। গোটা দেশে ৪৯ থেকে ৫২ কোটি পরিযায়ী শ্রমিক আছে।লকডাউনে কোটি কোটি মানুষ অসহায় হয়ে পড়েন।শত শত মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।বিভিন্ন জায়গায় আটকে পড়া মানুষজন লকডাউনের সময় হেঁটে হেঁটে  বাড়ি ফিরেছেন। তবুও  বিজেপি সরকার তাদের কথা ভাবে নি।পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য কোন চিন্তাও করেনি।মাণিক বাবু আরো দাবি করেন ,দেশে গরিব ও  বেকারের সংখ্যা বাড়ছে।কিন্তু দেশে কয়েকটি পরিবার শুধু  মুনাফা লুটছে। এর জন্য দায়ী আরএসএস পরিচালিত বিজেপি সরকার। মাণিক বাবু জানান ,আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রোল, ডিজেলের দাম কমলেও ভারতে পেট্রোল, ডিজেল ও গ্যাসের দাম বাড়ছে।আর তাতে লাভবান হচ্ছে আদানি,আম্বানিরা।এর থেকেই পরিস্কার হয়ে  যাচ্ছে বিজেপি মহাজন ও মালিকদের স্বার্থ দেখছে । কেন্দ্রের নয়া কৃষি আইন প্রসঙ্গে মাণিক সরকার বলেন, পুঁজিপতিদের হাত শক্ত করতে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার কৃষক বিরোধী বিল পাশ করেছে ।এরফলে প্রকৃত কৃষকরা বঞ্চিত হবে আর লাভবান হবে, সুবিধা পাবে কর্পোরেট সংস্থা গুলি । প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জানান ,কৃষি আইন বাতিলের জন্য মাসের পর মাস সারা ভারত কৃষকসভা আন্দোলন করছে।এছাড়াও কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র সবাই এখন বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে । বিজেপি সরকারের কঠোর সমালোচনা করে ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন , বিজেপি সরকার সাধারণ মানুষের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে।ধর্মের নামে কেউ যাতে ভারতবর্ষকে ভাগ করতে না পারে তার জন্য ভারতে সংবিধান তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু সেই সংবিধানকেও এখন আক্রমণ করা হচ্ছে। মানিক সরকার জানান, কাশ্মীরে সংবিধান প্রদত্ত আইন তুলে দিল বিজেপি সরকার। ৩৭০ ধারা আইন বাতিল করে সংবিধানকে অমান্য করেছে বিজেপি। কাশ্মীর বিধানসভায় কোন  আলোচনা ছাড়াই  সেখানকার সরকার  ভেঙে দিল । জেলে ঢুকিয়ে দিল সেখানকার জনপ্রতিনিধিদের।মাণিক বাবুর দাবি আরএসএস পরিচালিত বিজেপি সরকার গোটা দেশকে হিন্দুরাষ্ট্র করতে চাইছে। সংবিধানে নাগরিকের অধিকারের কথা উল্লেখ করা আছে।আর বিজেপি সরকার হিন্দুত্বের ভাবনা তৈরি করেছে।নতুন নাগরিক আইনে করে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হল।এইসব করে দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে তাদের অবদানকেই কার্যত  অস্বীকার করা হচ্ছে।  বাবরি মসজিদ মামলার রায়ের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে মাণিক বাবু বলেন ,সুপ্রিমকোর্ট বাবরি মসজিদ মামলায় সঠিক রায় দেয় নি ।  মাণিক বাবুর দাবি সুপ্রিম কোর্ট এই মামলায়  নিরপেক্ষ ভূমিকাও পালন করে নি।সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এখন রাজ্য সভার সাংসদ।সর্বোচ্চ  বিচারালয়ও  এখন  মাথা বিকিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। এদিন বর্ধমানের সভা মঞ্চ থেকে   নির্বাচন কমিশনকেও একহাত নেন মানিক সরকার। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ  ভূমিকা পালন করছে না। সেই কারণে মানুষ ভোট দিতেও পারছে না।তাদের ঘরছাড়া হতে হয়। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নির্বাচন কমিশন কেউই সঠিক ভূমিকা পালন করছে না বলে মাণিক বাবু মন্তব্য করেন ।  ত্রিপুরার বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়ে মাণিক সরকার বলেন , একটানা ২৫ বছর ত্রিপুরায়  একটা  সরকার ছিল ।সেখানে এখন আরএসএস পরিচালিত বিজেপি সরকার চালাচ্ছে  মাণিক বাবু বলেন ,ত্রিপুরায় যতদিন সিপিএম সরকার ছিল গরিব মানুষের কাছ থেকে ট্যাক্স আদায় করতে দেওয়া হয়নি  । সেই কারণে ত্রিপুরা থেকে বাম সরকারকে সরাতে ভোটের আগে থেকে ভিন রাজ্যের নেতা মন্ত্রীরা প্লেনে করে ত্রিপুরায় হাজির হতে থাকেন ।সবাইকে চাকরী দেওয়া হবে।ঘরে ঘরে চাকরী দেওয়া হবে বলে বিজেপি ঘোষণা করেছিল ।  চলো পাল্টাই ,আরো ভালো ত্রিপুরা তৈরি করবো।  এমনসব কত প্রতিশ্রতিই না দেওয়া হয়েছিল । কিন্তু এখন কি হল! বিজেপি ক্ষমতায় এল ঠিকই কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় নি। এখন ওরা  প্রতিশ্রুতি ভুলে গেছে। একশোদিনের কাজ নাই।গরিব মানুষ কাজ পাচ্ছে না।এখন ত্রিপুরায় একশোদিনের জায়গায় মাত্র ৪০ থেকে ৪৫ দিন কাজ হচ্ছে।বিজেপি মণ্ডলের লোকেরা এখন পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকারের মতোই একশো দিনের কাজের টাকা লুট করছে ।ত্রিপুরার মানুষ এখন বলছে সর্বনাশ করেছি।সোনার ডিমের জন্য হাঁসটা মেরে ফেলেছি বলছেন ত্রিপুরার বাসিন্দারা। তাঁরা এখন আগামী বিধানসভা ভোটের অপেক্ষায় রয়েছেন। ত্রিপুরায় কাটমানি কালচার চালু করেছে বিজেপি। সেখানে কারখানায় নোটিশ দিয়ে কাটমানি তুলছে বিজেপি ও আরএসএস।মাণিক বাবু জনসভা মঞ্চ থেকে আবেদন রাখেন , পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে  সরকার তৈরি করতে দেবেন না। তাহলে বড়  সর্বনাশ হয়ে যাবে বলে তিনি জানিয়েদেন ।

 





Others News

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা


প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( বর্ধমান ) : প্রায় এক বছর আগে আবেদন করেও মেয়ের জাতিগত শংসাপত্র মেলেনি । আবেদনকারীদের জাতি শংসাপত্র দেওয়ার
ক্ষেত্রে দেরি করা যাবেনা বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।কিন্তু বাস্তবে ঠিক তার উল্টোটাই ঘটে চলেছে।প্রায় এক বছর আগে  চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে  আবেদন করেছিলেন মা।কিন্তু মেয়ে কে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসলেও জাতি  শংসাপত্র আজও না মেলায় কার্যত হতাশ হয়ে পড়েছেন পূর্ব বর্ধমানের মেমারির রাধাকান্তপুর নিবাসী ঊর্মিলা দাস।ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য ঊর্মিলাদেবী বৃহস্পতি বার মেমারি ১ ব্লক বিডিও অফিসে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন। শংসাপত্র পাবার জন্য বিডিও সাহেব কি ব্যবস্থা করেন সেদিকেই এখন তাকিয়ে ঊর্মিলাদেবী। 

বিডিওকে লিখিত আবেদনে ঊর্মিলাদেবী জানিয়েছেন ,তাঁর স্বামী মানিক দাস দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী ।বছর ১০ বয়সী তাঁদের একমাত্র কন্যা গ্রামের বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত কালে তাঁর ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য তিনি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারী আবেদন করেছিলেন।  উর্মিলাদেবী বলেন ,তার পর থেকে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে  গেলেও তিনি তাঁর মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পান না।মেয়ের পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসায় গত অক্টোবর মাসের শেষের দিকে তিনি শংসাপত্রের বিষয়ে মেমারি ১ ব্লকের বিডিও অফিসে খোঁজ নিতে যান।জাতি শংসাপত্র বিষয়ের বায়িত্বে থাকা বিডিও অফিসের আধিকারিক তাঁকে অনলাইনে এই সংক্রান্ত একটি নথি বের করে আনতে বলেন । অনলাইনে সেই নথি বের করেনিয়ে তিনি ফের ওই আধিকারিকের কাছে যান । তা দেখার পর ওই আধিকারিক তাঁকে  ২০ দিন বাদে আসতে বলেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন , তিনি ২৫ দিন বাদে যাবার পর ওই আধিকারিক তাঁকে গোপগন্তার ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়ে খোঁজ নেবার কথা বলেন । তিনি এরপর গ্রামপঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যান । নথি ঘেঁটে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে কোন ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি।ঊর্মিলাদেবী দাবী করেন ,এই ভাবে তিনি একবার বিডিও অফিস , আবার পঞ্চায়েত অফিসে দরবার করে চলেন । কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছু হয় না। মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য  গত ১৩ ডিসেম্বর ফের তিনি বিডিও অফিসে যান ।ওই দিনও বিডিও অফিসের জাতি শংসাপত্র বিষয়ক বিভাগের আধিকারিক তাঁকে একই ভাবে পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যেতে বলে দায় সারেন। পরদিন তিনি পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে গেলে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ ফের জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে  ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি । কেন মেয়ের জাতি শংসাপত্র পাচ্ছেন না সেই বিষয়ে  না পঞ্চায়েত না ব্লক প্রশাসনের কর্তৃপক্ষ কেউই তাঁকে কিছু জানাতে পারেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন ,পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির আগে তার মেয়ে যাতে ওবিসি শংসাপত্র পেয়ে যায় তার ব্যবস্থা করার জন্য এদিন তিনি বিডিওর কাছে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন । মেমারী ১ ব্লকের বিডিও আলী মহম্মদ ওলি উল্লাহ এদিন বলেন ,“জাতি শংসাপত্র পাবার জন্য হাজার হাজার আবেদন জমা পড়ছে । তবে ঊর্মিলাদেবীর কন্যা দ্রুত যাতে বিবিসি শংসাপত্র দ্রুথ পান সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে “। মেমারির বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য্য বলেন,’মেমারি  বিধানসভা এলাকার আবেদনকারীরা দ্রুত যাতে জাতি শংসাপত্র পান সেই বিষয়ে প্রশাসনকে আরও তৎপর হওয়ার কথা বলবো’।